এই বিভাগের আরও খবর
করোনা ভাইরাসের ছোবলে পড়ে দিশেহারা মানুষ। প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। মানুষ লড়াই করছে চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাস। এই লড়াইয়ে মানুষকে সাহায্য করতে পারে ভিটামিন ডি।
এক মার্কিন গবেষণায় দেখা গেছে, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত যেসব রোগীর দেহে উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন ডি আছে, তাদের বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
ডেইলি মেইলেইর খবরে বলা হয়েছে, গবেষণায় আরও দেখা গেছে- মারাত্মকভাবে ভিটামিন ডি সংকট থাকলে রোগীর জটিল অবস্থায় যাওয়ার বা মারা যাওয়ার ঝুঁকি দ্বিগুণ বেড়ে যায়।
তবে নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির গবেষকরা বলছেন, পর্যবেক্ষণমূলক এই তথ্যপ্রমাণ এখনও প্রাথমিক পর্যায়ের। তাই তারা এখনই এটা ব্যবহারে সতর্কতা দিয়েছেন। ভিটামিন ডি এবং করোনাভাইরাসে মৃত্যুহারের মধ্যে সম্পর্ক বোঝার জন্য তারা আরো গবেষণার আহ্বান জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, মাছ এবং মাশরুমের মতো খাবারের মাধ্যমে মানুষের শরীরে ভিটামিন ডি তৈরি হতে পারে অথবা রোদে গেলে ত্বক এই ভিটামিন ডি তৈরি করতে পারে।
বৃটেনের স্বাস্থ্যবিভাগ বলছে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির প্রতিদিন প্রায় ১০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন ডি প্রয়োজন।
এর আগেও আলাদা কিছু গবেষণায় বলা হয়েছিল, ভিটামিন ডি-এর কম মাত্রার ফলে মানুষের করোনাভাইরাসে মৃত্যু হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। এ ছাড়া করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সুস্থ করতে সহায়তা করতে পারে ভিটামিন ডি।
রিজে ইউনিভার্সিটি আমস্টার্ডামের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব দেশে ভিটামিন ডি-এর স্বল্পতা রয়েছে সেখানে করোনা ভাইরাসে মৃত্যুহার বেশি এবং করোনায় সংক্রমিত হওয়ার হারও বেশি। তাদের এই পূর্বাভাসই যেন প্রতিধ্বনি তুলছে মার্কিন সর্বশেষ গবেষণায়।
সম্প্রতি ট্রিনিটি কলেজ ডাবলিন গবেষণায় দেখতে পেয়েছে, যেসব প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ ভিটামিন ডি সেবন করেছেন তাদের বুকের সংক্রমণে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি শতকরা ৫০ ভাগ কমে যায়।
এরপরই বর্তমানে একই রকম একটি গবেষণায় চালাচ্ছে ইউনির্ভাসিটি অব গ্রানাডা। তাদের গবেষণাটি ১০ সপ্তাহব্যাপী একটি ট্রায়াল। গবেষকরা যেসব দেশে করোনা ভাইরাস মারাত্মক আকারে দেখা দিয়েছে সেখানকার পরিসংখ্যান ব্যবহার করেছেন। এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া, স্পেন, সুইজারল্যান্ড, বৃটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকের ডাটা। এই গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে অনলাইন মেডআরসিভ নামের অনলাইনে।
সাধারণত যেকোনও মহামারীকালে সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে ঘরে থাকাকেই উৎসাহিত করা হয়। বর্তমানে করোনা ভাইরাস মহামারীতেও সেটাই হচ্ছে। মানুষ ঘরে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে। বাড়ছে বিভিন্ন হতাশা ও মানসিক সমস্যা। তাই মনকে সতেজ, উদ্দীপ্ত এবং শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হাঁটা বেশ ভালো একটি অভ্যাস। সংক্রামক ভাইরাসের এ মহামারীরকালে হাঁটার ক্ষেত্রে বেশকিছু সাবধানতা অবলম্বন করে সেটা করা যায়। তেমনই দরকারি সাতটি পরামর্শ এখানে তুলে ধরা হলো।
হাঁটার সময় মাস্ক পরা: করোনা ভাইরাস কীভাবে ছড়ায়, তা নিয়ে এখনো বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি। তবে বেশির ভাগ দেশেই নাগরিকদের মাস্ক পরে নাক-মুখ ঢেকে রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে পার্ক কিংবা বাজারের মতো জনাকীর্ণ স্থানগুলোতে বাতাসে ভেসে থাকা ভাইরাসের কাছ থেকে বাঁচতে নাক-মুখ ঢেকে রাখার কথা বলা হয়েছে।
হাতকে নিয়ন্ত্রণে রাখা: আপনি যখন হাঁটতে যাবেন, তখন পার্কের বেঞ্চ ও পানির ঝরনাসহ বিভিন্ন জায়গায় ভাইরাসের উপস্থিতি থাকতে পারে। যেখানে হাতের স্পর্শে আপনিও সংক্রমিত হতে পারেন। তাই বিশেষজ্ঞ পরামর্শ হচ্ছে, হাত দিয়ে কোনো জায়গা স্পর্শ থেকে বিরত থাকুন। পাশাপাশি হাতকে সঠিকভাবে পরিষ্কার করার আগ পর্যন্ত সেটি নাক-মুখ স্পর্শ করবেন না।
সানগ্লাস পরুন: অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন করোনাভাইরাস চোখের মাধ্যমেও আপনাকে আক্রান্ত করতে পারে। সেক্ষেত্রে বাইরে বেরুনোর সময় সানগ্লাস পরা হতে পারে ভালো সমাধান। বিশেষ করে চোখে ভালোভাবে আটকে থাকে এমন সানগ্লাসই বেশি উপকারী।
ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা এড়িয়ে চলুন: সাধারণত আক্রান্ত কারো সরাসরি সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে যে কেউ এই ভাইরাসে সংক্রমিত হতে পারেন। কিন্তু কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ বলছেন, ভাইরাস বাতাসেও কিছু সময়ের জন্য ভেসে থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে কেউ আক্রান্ত হতে পারেন। শ্বাসযন্ত্র থেকে নির্গত ড্রপলেট বাতাসে কিছু সময় ভেসে থাকতে পারে। তাই রাস্তায় চলাচলের সময় কিছুটা কৌশলী হতে পারেন। হাঁটার জন্য খালি রাস্তা খুঁজে নিন এবং সরাসরি কারো পেছনে হাঁটা থেকে বিরত থাকুন।
জুতা জীবাণুমুক্ত করে নিন: আক্রান্তের শ্বাসপ্রশ্বাস থেকে নির্গত ড্রপলেট বিভিন্ন বস্তুর বাইরে মাটিতেও পড়ে থাকতে পারে। যা কিনা আপনার জুতার সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। সম্প্রতি একটি প্রতিবেদনে জানা যায়, হাসপাতালের ফ্লোরে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। তাই এ ভাইরাস জুতার সঙ্গে যুক্ত হয়ে বাসা পর্যন্ত চলে আসতে পারে। যার ফলে আপনি আক্রান্ত হতে পারেন এবং সঙ্গে আপনার পরিবারের সদস্যরাও। তাই বাসায় ফিরেই সবার আগে জুতা জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে।
আশপাশে দৃষ্টি রাখুন: বাইরে যাওয়ার সময় সতর্কতা বজায় রাখলে আপনি নিরাপদ থাকতে পারেন। জাপানের একদল গবেষক বলছেন, বাতাসের সঙ্গে ভাইরাসটি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় উড়ে যেতে পারে। আবার অনেকে বলছেন গরম, সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ও আর্দ্রতা ভাইরাসের ক্ষতি করতে পারে। তবে যেহেতু আমরা নিশ্চিতভাবে জানি না, তাই সতর্কতা অবলম্বন করাই দায়িত্বশীল আচরণ।
ব্যায়ামের স্থান পরিষ্কার রাখুন: আপনি হয়তো হাঁটার জন্য ট্রেডমিলকে বেছে নিতে পারেন। আবার অনেক জায়গায় ব্যায়ামারগুলোও খোলা হচ্ছে। সেসব জায়গায় সামাজিক দূরত্বের নিয়ম কার্যকরসহ পরিচ্ছন্নতার সবগুলো শর্ত পূরণ করা বাধ্যতামূলক হতে হবে। নয়তো সেসব জায়গা থেকে ফের ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে।