১১ই ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ , ২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
জাতীয় চার নেতার অন্যতম ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর ছেলে, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, ১৪ দলের মুখপাত্র, সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, আমাদের মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে মোহাম্মদ নাসিম ছিলেন নির্ভীক যোদ্ধা। তিনি জনগণের প্রিয় নেতা ছিলেন বলেই পাঁচবার সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার মৃত্যু বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতিতে এক অপূরণীয় ক্ষতি। দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে মোহাম্মদ নাসিমের নাম চির ভাস্বর হয়ে থাকবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গবন্ধুর অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহচর জাতীয় চার নেতার অন্যতম ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর ছেলে মোহাম্মদ নাসিম গণতন্ত্র, দেশ, দল, জনগণসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশে যে অবদান রেখেছেন জাতি তা চিরদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।
তার মৃত্যুতে বাংলাদেশ একজন নিবেদিত প্রাণ রাজনীতিককে হারালো।
রাষ্ট্রপতি মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের একাধিক ওয়ার্ড এবং তিন জেলার বিভিন্ন এলাকাকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। করোনা প্রতিরোধে গঠিত কেন্দ্রীয় টেকনিক্যাল কমিটির গতকাল শনিবারের সভায় এসব এলাকাকে চিহ্নিত করা হয়। সভার একটি কার্যবিবরণী থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
সভার সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, জেলার জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন এবং পুলিশ সুপার মিলে এসব জোনের মধ্যে সুনির্দিষ্টভাবে লাল এলাকা চিহ্নিত করবেন।
ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটির মোট ৪৫টি এলাকাকে ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটির ১৭ এবং দক্ষিণ সিটির ২৮টি এলাকা আছে। আর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকার ১১টি এলাকা রেড জোনের মধ্যে পড়েছে।
ঢাকার বাইরে নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর জেলার একাধিক উপজেলাকে রেড জোন চিহ্নিত করা হয়েছে। গতকাল শনিবার সেন্ট্রাল টেকনিক্যাল গ্রুপের সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে বৈঠকের একটি সূত্র জানিয়েছে।
ঢাকা উত্তর সিটি:
উত্তর সিটি করপোরেশনের যে ১৭ এলাকাকে রেড জোন হিসেবে ধরা হয়েছে সেগুলো হলো: গুলশান, বাড্ডা, ক্যান্টনমেন্ট, মহাখালী, তেজগাঁও, রামপুরা, আফতাবনগর, মোহাম্মদপুর, কল্যাণপুর, গুলশান, মগবাজার, এয়ারপোর্ট, বনশ্রী, রাজাবাজার, উত্তরা, মিরপুর।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি:
দক্ষিণ সিটির ২৮টি এলাকার মধ্যে আছে: যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, মুগদা, গেন্ডারিয়া, ধানমন্ডি, জিগাতলা, লালবাগ, আজিমপুর, বাসাবো, শান্তিনগর, পল্টন, কলাবাগান, রমনা, সূত্রাপুর, মালিবাগ, কোতোয়ালি, টিকাটুলি, মিটফোর্ড, শাহজাহানপুর, মতিঝিল, ওয়ারী, খিলগাঁও, পরিবাগ, কদমতলী, সিদ্ধেশ্বরী, লক্ষ্মীবাজার, এলিফ্যান্ট রোড, সেগুনবাগিচা।
চট্টগ্রাম সিটি:
চট্টগ্রাম সিটির ১০ এলাকাকে রেড জোনের মধ্যে রাখা হয়েছে। সেগুলো হলো, চট্টগ্রাম বন্দরে ৩৭ ও ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড, পতেঙ্গার ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড, পাহাড়তলির ১০ নম্বর ওয়ার্ড, কোতোয়ালির ১৬, ২০, ২১ ও ২২ নম্বর ওয়ার্ড, খুলশীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ড, হালিশহর এলাকার ২৬ নম্বর ওয়ার্ড।
আরও তিন জেলা:
ঢাকার বাইরের তিন জেলার মধ্যে গাজীপুরের সব কটি উপজেলাকে রেড জোনের আওতার মধ্যে আনা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার, রূপগঞ্জ, সদর এবং পুরো সিটি এলাকাকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
ঢাকার দুই সিটি ও চট্টগ্রামের যেসব এলাকায় প্রতি এক লাখ জনসংখ্যায় ১৪ দিনে ৬০ জন আক্রান্ত হয়েছে সেসব এলাকাকে রেড জোন চিহ্নিত করা হয়েছে। ঢাকার বাইরে এই অনুপাত লাখে ১০।
নারায়ণগঞ্জ জেলার সিভিল সার্জন ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, বাস্তব পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সিদ্ধান্ত নেব কোন এলাকার কোন অঞ্চলকে রেড জোন করা হবে। পুরো অঞ্চলকে লকডাউন করা সম্ভব না। যে পয়েন্টে রোগী সংখ্যা বেশি সেটিকে চিহ্নিত করা হবে। সিভিল সার্জন বলেন, রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজারে এখন সংক্রমণ বাড়ছে। তবে সিটি এবং সদরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।
নারায়ণগঞ্জ সিটির মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী অবশ্য মনে করেন, সিটি এলাকার পুরোটাই এখন লকডাউন করা উচিত বলেন মনে করেন তিনি।
আর নরসিংদীর সদর মডেল থানা, মাধবদী ও পলাশ এলাকা।
গতকালের সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় টেকনিক্যাল গ্রুপ তাদের এলাকায় রেড জোন চিহ্নিত করতে সহযোগিতা করবে। এ ছাড়া তারা স্থানীয় প্রশাসনের সিদ্ধান্তগুলো পর্যবেক্ষণ করবেন। গতকাল টেকনিক্যাল কমিটির সভায় সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ। তবে সিদ্ধান্তের ব্যাপারে জানতে ফোন করলে তিনি ফোন ধরেননি।
কেন্দ্রীয় টেকনিক্যাল গ্রুপের সদস্য ও সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক মীরজাদি সেব্রিনা প্রথম আলোকে বলেন, কিছু কিছু এলাকা নির্দিষ্ট করা হচ্ছে। ঢাকার এলাকাগুলোতে আমরা সহযোগিতা করছি। কিন্তু নির্দেশনা হচ্ছে, সিভিল সার্জন মহোদয়েরা নিজেরাই ঘোষণা করবেন। আমরা তাদের সহযোগিতা করব। এটা স্থানীয়ভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। স্থানীয়ভাবে সিদ্ধান্ত হওয়াটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’
গতকালের সভায় রেড জোনের আওতায় যেসব এলাকাকে ফেলা হয়েছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে মীরজাদী সেব্রিনা বলেন, ‘এই তালিকা কিন্তু আমরা প্রকাশ করিনি।’ ঢাকা উত্তর সিটির ১৭ এলাকার একটি তালিকা রেড জোনের এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করার বিষয়টি দাপ্তরিকভাবে এখনো তাঁকে জানানো হয়নি বলে জানান উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম। তবে তিনি মন্ত্রণালয় মারফত বিষয়টি জানতে পেরেছেন। আতিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ১৭টি এলাকার বিষয়টি জেনেছি। কিন্তু এখানে যেসব এলাকার কথা বলা হয়েছে সেগুলো সুনির্দিষ্ট করে দিতে হবে। যেমন আগে বলা হয়েছিল রাজাবাজার। পরে দেখা গেল, শুধু পূর্ব রাজাবাজারকে লকডাউন করতে হবে। এখন কোনো এলাকা যদি রেড জোনের মধ্যে ফেলে তা লকডাউন করতে হয় তবে আমাকে অন্তত ৪৮ ঘণ্টা সময় দিতে হবে। কারণ আমাদের প্রস্তুতির দরকার আছে।’
ঢাকা উত্তর সিটির পূর্ব রাজাবাজের গত ৯ জুন রাত ১২টা থেকে লকডাউন শুরু হয়েছে। এ ছাড়া গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার তিনটি ওয়ার্ড, মাধবদীর বিরামপুর এলাকা ও পলাশের চরসুন্দর এলাকা এখন লকডাউন আছে। সূত্রঃ প্রথম আলো
ধর্মবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহ ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আজ শনিবার দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।
প্রতিমন্ত্রীর মৃত্যুর খবর প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন তাঁর সহকারী একান্ত সচিব শেখ নাজমুল হক। প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অসুস্থবোধ করায় আজ রাতে প্রতিমন্ত্রীকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নেওয়া হয়। সেখানে রাত পৌনে ১২টার দিকে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, শেখ মো. আব্দুল্লাহ ১৯৪৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জ জেলার মধুমতী নদীর তীরবর্তী কেকানিয়া গ্রামের জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম মতিউর রহমান এবং মা রাবেয়া খাতুন। চার ভাই তিন বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। তিনি স্থানীয় গওহরডাঙ্গা হাফেজিয়া মাদ্রাসায় পবিত্র কোরআন হেফজের মাধ্যমে শিক্ষাজীবন শুরু করেন। এর পর একই মাদ্রাসার কওমী ধারায় পড়াশুনা করেন। তিনি সুলতানশাহী কেকানিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা এবং সুলতানশাহী কেকানিয়া হাই স্কুল থেকে ১৯৬১ সালে মেট্রিক পাসের মাধ্যমে মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। তিনি খুলনার আযম খান কলেজ থেকে ১৯৬৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক, ১৯৬৬ সালে বিকম (অনার্স) ডিগ্রী সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭২ সালে এম.কম. এবং ১৯৭৪ সালে অর্থনীতিতে এম.এ ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৭৭ সালে ঢাকা সেন্ট্রাল ‘ল’ কলেজ থেকে এলএলবি ডিগ্রী অর্জন করেন।
শেখ মো. আব্দুল্লাহ ছাত্রজীবনেই রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। তিনি খুলনার আযম খান কমার্স কলেজে প্রথম ভিপি নির্বাচিত হন। গত শতকের ষাটের দশকে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তানে ছয়দফার উত্তাল আন্দোলন চলছিল । এ সময় ১৯৬৬ সালের ছয়দফা আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধুর সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে রাজনীতিতে গভীরভাবে সম্পৃক্ত হন। যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মনির নেতৃত্বে তিনি আওয়ামী যুবলীগে যোগদান করেন । এ সময় তিনি বঙ্গবন্ধুর সরাসরি তত্ত্বাবধানে গঠিত গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি কেন্দ্রীয় আওয়ামী যুবলীগের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। এরপর ১৯৭০ এর নির্বাচনে স্থানীয় রাজনীতিতে জড়িত হয়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামীলীগের ব্যাপক নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফ্রন্ট মুজিব বাহিনীর সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন শেখ মো. আব্দুল্লাহ। বাঙ্গালীর স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হলে তিনি মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কিন্তু রাজনৈতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে দেশ সেবা করার লক্ষ্যে চাকরির পরিবর্তে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং তাঁর নেতৃত্বে রাজনীতি করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এরপর কাউন্সিলের মাধ্যমে গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। দীর্ঘদিন তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জাতীয় পর্যায়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
শেখ মো. আব্দুল্লাহ ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। বিভিন্ন শিক্ষা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতাও প্রদান করেছেন। তিনি অসংখ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা এবং পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ধর্মীয় ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখে আসছেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে শেখ মো. আব্দুল্লাহ ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন।
জাতীয় চার নেতার অন্যতম ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর ছেলে ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে একজন বিশ্বস্ত সহযোদ্ধাকে হারালাম।
রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে টানা নয় দিন ধরে লাইফ সাপোর্টে থাকা নাসিমকে শনিবার বেলা ১১টার দিকে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পিতার মতোই মোহাম্মদ নাসিম আমৃত্যু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে ধারণ করে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করে গেছেন। সকল ঘাত-প্রতিঘাত উপেক্ষা করে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রতিষ্ঠায় তিনি অনন্য অবদান রেখেছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে বাংলাদেশ একজন দেশপ্রেমিক ও জনমানুষের নেতাকে হারাল। আমি হারালাম একজন বিশ্বস্ত সহযোদ্ধাকে।’
প্রধানমন্ত্রী তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
বিশ্বে প্রতিদিন নতুন শনাক্ত হওয়া করোনা রোগীর সংখ্যা বিষয়ক তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান এখন ৯ নম্বরে। তবে শুক্রবার (১২ জুন) রাত ১০টায় এই তালিকার সপ্তম অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। পরে রাত ১২টা ২০ মিনিটে ওয়ার্ল্ডো মিটারের আপডেট হওয়া এই তালিকায় ব্রাজিল ও চিলি যুক্ত হওয়ায় ২ ধাপ নিচে নেমে আসে বাংলাদেশ।
নতুন শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যার শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, রাশিয়া, চিলি, পাকিস্তান, মেক্সিকো, সৌদি আরব ও ব্রাজিল। এশিয়ার মধ্যে নতুন শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান চার নম্বরে। এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে ভারত, পাকিস্তান ও সৌদি আরব।
অ্যাকটিভ কেসের অর্থাৎ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বিষয়ক তালিকায় বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান সাত নম্বরে। বাংলাদেশে মোট অ্যাকটিভ কেসের সংখ্যা ৬৩ হাজার ১৭৯ জন। এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে অ্যাকটিভ কেসের সংখ্যা ১১ লাখ ৬০ হাজার ৮৯৩ জন।
অ্যাকটিভ কেসের ক্ষেত্রে এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে ভারত (১ লাখ ৪৪ হাজার ৮৩৮) এবং পাকিস্তান (৮৩ হাজার ২২৩)।
অ্যাকটিভ কেস বলতে মোট শনাক্তের মধ্যে সুস্থ হওয়াদের বাদ দিয়ে এখন যারা আক্রান্ত আছেন তাদেরকে অ্যাকটিভ কেস বলে ধরা হয়।
দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ৯৭তম দিনে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু ও সর্বাধিক করোনা রোগী শনাক্তের সংবাদ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, গত চারদিন ধরে দেশে প্রতিদিন রোগী শনাক্ত হচ্ছেন তিন হাজারের বেশি। গত ৯ জুন শনাক্ত ছিল তিন হাজার ১৭১ জন, ১০ জুন ছিল তিন হাজার ১৯০ জন, ১১ জুন ছিল তিন হাজার ১৮৭ জন আর আজ ১২ জুন তিন হাজার ৪৭১ জন রোগী শনাক্ত হবার কথা জানিয়েছে সরকারি এই প্রতিষ্ঠান। এদিন দেশে সর্বোচ্চ মৃত্যুর খরবও দেয় তারা। গত ১৮ মার্চ প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী মারা যায়, আর গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৪৬ জন।
এই নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত হলেন ৮১ হাজার ৫২৩ জন আর মোট মারা গেলেন এক হাজার ৯৫ জন। পাশাপাশি এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন মোট ১৭ হাজার ২৪৯জন। গত আট মার্চ দেশে প্রথম করোন আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হন তিনজন। শুরুর দিকে করোনা পরীক্ষা কেবলমাত্র রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) হলেও বর্তমানে দেশের সরকারি বেসরকারি মিলিয়ে ৫৯টি পরীক্ষাগারে করোনার নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে। তবে যত রোগী শনাক্ত হচ্ছেন তার বাইরেও অসংখ্য রোগী রয়েছে বলে জানিয়েছে বিশেষজ্ঞরা। একইসঙ্গে করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির সংখ্যাও কম নয়।
বাংলাদেশ পরবর্তী এপি সেন্টার কিনা জানতে চাইলে আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটা কেবল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাই বলতে পারবে, তবে তারা বলেছে এখানে রোগী সংখ্যা বাড়ছে। দক্ষিণ আমেরিকা এবং দক্ষিণ এশিয়াতে রোগী সংখ্যা বাড়ছে, তবে দক্ষিণ এশিয়াতে এখনও এক্সপ্লোশন অব এপিডেমিক হয়নি। তবে আশঙ্কা রয়েছে। পাকিস্তানকে ইতোমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যা পরামর্শ দিয়েছে রোগী সংখ্যা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে।’
তিনি বলেন, ‘জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটিও সুপারিশ করেছে ছোট এলাকা ধরে লকডাউন করলে কিছু হবে না, বড় এলাকা নিয়ে করতে হবে। ভারতের মুম্বাইসহ মহারাষ্ট্রের অবস্থাও খারাপ।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বরাত দিয়ে তিনি জানান, দক্ষিণ আমেরিকা এবং দক্ষিণ এশিয়াতে রোগী সংখ্যা বাড়ছে। দক্ষিণ আমেরিকার মতো এখন দক্ষিণ এশিয়াতে অতোটা খারাপ অবস্থা হয়নি। তবে এভাবে চলতে থাকলে ‘কিন্তু গোয়িং টু বি’।
এক্সপ্লোশন অব এপিডেমিক বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা যদি খুব দ্রুত নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ না নিতে পারি তাহলে রোগী সংখ্যা অনেক বাড়তে পারে। কাজেই হটস্পটের আশঙ্কাতো আছেই। তবে কোনও এলাকাতে ‘এক্সপ্লোশন অব এপিডেমিক’ বা ঘনীভূত মহামারি এখনও দেখা যায়নি, তবে ঢাকাতে জোনিং করা গেলে সেটা হয়তো বিলম্বিত করা যাবে।’
আর এজন্য কঠিন লকডাউনসহ অন্যান্য পদক্ষেপগুলো কঠোরভাবে কার্যকর করতে হবে, নয়তো কোনও উপায় নাই বলেও মন্তব্য করেন মুশতাক হোসেন।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, ‘এই উপমহাদেশ ইতিমধ্যেই এপি সেন্টার হয়ে আছে। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানে প্রতিদিন সংক্রমণের হারও যেমন বেশি তেমনি মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে প্রতিদিন। এ তিন দেশেই অন্যান্য দেশের তুলনায় পরীক্ষা কম হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘করোনার লক্ষণ উপসর্গ নিয়ে যারা মারা যাচ্ছে তাদের তালিকা এতে যোগ হচ্ছে না। যার কারণে প্রকৃত ঘটনার চেয়ে সংখ্যা অনেক কম। তবে এই তিন দেশেই নতুন রোগীর সংখ্যা উর্ধ্বমুখী। সেক্ষেত্রে এ উপমহাদেশ পুরোটাই নতুন এপি সেন্টার, তবে বাংলাদেশের অবস্থা একটু বেশি খারাপ। তবে সাধারণ সূত্র অনুযায়ী যে দেশে মহামারী পরে আসবে সেই দেশ থেকে দূর হবেও দেরিতে। এছাড়া আমরা মোকাবিলা করতে পারছি না, যার কারণে যাবে আরও পরে।’
দেশের কিছু মানুষ সচেতন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন, কিছু মানুষ মানেন না, কিছু আছে তারা বোঝেনই না আসলে কী হচ্ছে মন্তব্য করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কোভিড মোকাবিলার জন্য আমরা বেশি পদক্ষেপ নিতে পারিনি। যা করার দরকার ছিল সেটা করতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘গত ১১ এপ্রিল রোগী শনাক্তের হার ছিল ছয় দশমিক শূন্য সাত এবং ১৭ এপ্রিল ১২ দশমিক ১৪ শতাংশ। এরই ভেতরে পোশাক কারখানা খুলে দেওয়া হলো ২৬ এপ্রিল। তার ১৪ দিন পর ৯ মে রোগী শনাক্তের হার ছিল ১১ দশমিক ৬৩ শতাংশ, ১০ মে সেখান থেকে লাফ দিয়ে হলো ১৫ দশমিক চার শতাংশ। তারপর আবার ২০ মে হলো ১৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ, ২১ মে ১৭ দশমিক ২৭ শতাংশ। তারপর থেকে হার ছিল যথাক্রমে প্রতিদিন ১৭ দশমিক ৪১ শতাংশ, ১৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ, ১৭ দশমিক ১৯ শতাংশ এভাবে বাড়তে লাগলো। কিন্তু ২৫ মে রোগী শনাক্তের হার চলে গেল ২০ এর ঘরে। ২৬ মে ঈদের ছুটিতে মানুষ ঢাকা ছাড়লো। এরপরে গত ৯ জুন হলো ২১ দশমিক ৬৩, ১০ জুন ১৯ দশমিক ৯৮, ১১ জুন ২০ দশমিক ২১ এবং আজ হচ্ছে ২১ দশমিক ৭১।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের রোগী শনাক্তের হার কিন্তু আরও বাড়ার কথা ছিল, কিন্তু সেটা হয়নি। আমরা এখন পিকের চূড়ায় না উঠে সমান্তরালভাবে চলছি। সংক্রমণের হার এরচেয়ে আর বাড়বে না বলেই আমার মনে হয়।’
তিনি জানান, নমুনা সংগ্রহ যদি আরও রেগুলার হতো এবং নমুনা যদি নষ্ট না হতো তাহলে এই হিসাব আরও ভালো পাওয়া যেতো।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, শরীরে মহামারি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ হয় আমাদের হাতের মাধ্যমেই। আর হাত সুরক্ষিত জীবাণুমুক্ত রাখতে আমরা দিনে বহুবার সাবান পানি দিয়ে হাত ধুয়ে নিচ্ছি। ব্যবহার করছি স্যানিটাইজার। এসবের চেয়েও বাইরে বের হলে হাতে গ্লাভস ব্যবহার করা বেশি নিরাপদ।
গ্লাভস ব্যবহারের ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো মাথায় রাখা জরুরি। আসুন জেনে নেই:
• গ্লাভস পরে হয়তো হাতে জীবাণুর লাগবে না, তবে লেগে থাকবে গ্লাভসের গায়ে
• গ্লাভসের সিলিকন, পলিথিন বা রবারের ওপরেই করোনা ভাইরাস দীর্ঘক্ষণ বেঁচে থাকে
• গ্লাভস পরে থাকা অবস্থায় শরীরের খোলা কোনো স্থানে হাত দেবেন না
• গ্লাভস খোলারও রয়েছে একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি
• দু’টি আঙুল দিয়ে সাহায্যে হাতের কবজির সামনে থাকা গ্লাভসের অংশ টেনে সেটি খোলা উচিত।
• নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলে দিতে হবে
• গ্লাভস খোলার পর অবশ্যই হাত ধুয়ে নেবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১২ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০২০
এসআইএস
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি। ফাইল ছবি।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি এবং তার স্ত্রী লায়লা আরজুমান্দ বানুর কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া, মন্ত্রীর একান্ত সচিব হাবিবুর রহমানও করোনা আক্রান্ত হয়েছেন।
করোনা উপসর্গ থাকায় বৃহস্পতিবার তাদের নমুনা পরীক্ষা করা হলে আজ শুক্রবার তাদের দেহে কোভিড-১৯ পজেটিভ ফলাফল পাওয়া যায়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা সুফি আব্দুল্লাহিল মারুফ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পরবর্তীতে মন্ত্রী নিজেই বিষয়টি যমুনা নিউজকে নিশ্চিত করেছেন।
মন্ত্রী জানিয়েছেন, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি ও তার স্ত্রী। দ্রুত আরোগ্য লাভের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন তিনি।
এর আগে, করোনা আক্রান্ত হয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং। তিনি ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন আছেন।
করোনা ভাইরাসের ছোবলে প্রায় এক কোটি প্রবাসী বাংলাদেশি। মরণঘাতি এই ভাইরাসের মৃত্যুর মিছিলে শত শত বাংলাদেশি।
প্রবাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে সংখ্যা বেশি, সেখানে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বাংলাদেশি রেমিটেন্স যোদ্ধাদের আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা।
পুরো যুক্তরাষ্ট্রেই নাজুক অবস্থা। সবমিলিয়ে আমেরিকায় করোনায় ২৫৮ বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। এরপরই যুক্তরাজ্য ও সৌদি আরব।
বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও কমিউনিটির দেয়া তথ্যমতে, রবিবার (১৭ মে) সন্ধ্যা পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিদেশে ৬৭৭ জন বাংলাদেশি প্রবাসীর মৃত্যু হয়েছে।
এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ২৫৮ জন, যুক্তরাজ্যে ২০০ জন, সৌদি আরবে ১০৯ জন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৪৫ জন, কুয়েতে ১৭ জন, ইতালিতে ১১ জন, কানাডায় ৯ জন, সুইডেনে ৮ জন, ফ্রান্স ৫ জন, স্পেনে ৫ জন, কাতারে ৪ জন, মালদ্বীপ, পর্তুগাল, কেনিয়া, লিবিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও গাম্বিয়ায় ১ জন করে বাংলাদেশি মারা গেছেন।
তবে আক্রান্তের দিক থেকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি আক্রান্ত হয়েছেন সিঙ্গাপুরে। গতকাল পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২৯ হাজার। তাদের মধ্যে বাংলাদেশির সংখ্যা ১৫ হাজারের মতো। সিঙ্গাপুরে পর সৌদি আরবে সাত হাজার এবং কাতারে তিন হাজার বাংলাদেশি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন চিকিৎসক ডা. ফেরদৌস খন্দকারকে কোন আইনের ক্ষমতাবলে ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে তা জানাতে সরকারকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, করোনাকালে বাংলাদেশের মানুষকে সেবা দিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের সুপরিচিত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. ফেরদৌস খন্দকার ৭ জুন ঢাকায় আসেন। কাতার এয়ারওয়েজের বিশেষ ফ্লাইটে নিউইয়র্ক থেকে ডা. ফেরদৌসের সঙ্গে আরও ১১২ বাংলাদেশি দেশে আসেন। গত ৮ জুন করোনা মোকাবেলায় চীন থেকে সেদেশের বিশেষজ্ঞ দল ঢাকায় আসেন। কিন্তু এদের মধ্যে ডা. ফেরদৌসকে ছাড়া অন্য কাউকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে নেওয়া হয়নি। তাই প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সকলের বিষয়ে সমান বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি, যা বাংলাদেশের সংবিধানে প্রদত্ত মৌলিক অধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
শুক্রবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের (জননিরাপত্তা বিভাগ) জ্যেষ্ঠ সচিব, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের (সুরক্ষা সেবা বিভাগ) সচিব এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সচিবকে ই-মেইলের মাধ্যমে এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে। নোটিশপ্রাপ্তির ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে হাইকোর্টে রিট করা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জামিউল হক ফয়সালের পক্ষে ব্যারিস্টার গাজী ফরহাদ রেজা এ নোটিশ পাঠান।
নোটিশে বলা হয়, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ফেরদৌস যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের কাছে বড় আশা ও ভরসার প্রতীক। করোনা ভাইরাসের ভয়ে যেখানে বিশ্বের অনেক বাঘা বাঘা ডাক্তার তাদের চেম্বার বন্ধ করে অন্দরে ঢুকে গেছেন, সেখানে নিউইয়র্কের মতো মৃত্যুপুরীতে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঘরে ঘরে গিয়ে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিয়েছেন তিনি। গত ৭ জুন তিনি দেশে ফিরেছেন বাংলাদেশে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে। তবে পত্রপত্রিকার মাধ্যমে জানা যায়, তাকে এয়ারপোর্ট থেকে বের হতে দেয়া হয়নি, কারণ ডা. ফেরদৌস খন্দকার করোনা শনাক্তের অ্যান্টিবডি টেস্ট করা হয়। এর ফলাফল পজিটিভ এসেছিল। তাই উনি একজন করোনা যোদ্ধা। করোনা ভাইরাসের চিকিৎসায় বাংলাদেশে প্লাজমা থেরাপি কার্যকর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রায়ই রোগীর পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট রক্তের গ্রুপের প্লাজমা খোঁজা হচ্ছে। দেশের এই ক্রান্তিকালে সরকার ডা. ফেরদৌস খন্দকারদের মত মানুষদের খুঁজছে এবং তিনি শুধু প্লাজমা হিরো হিসেবেই নন একজন প্রথিতযশা ডাক্তার হিসেবে দেশের অনেক মানুষের উপকারে আসতে পারেন।