১১ই ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ , ২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সারাদেশের আইসিইউর সেন্ট্রাল মনিটরিং আছে কি না তা মঙ্গলবারের (৯ জুন) মধ্যে জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে কোভিড রোগীদের জন্য কতটা আইসিইউ আছে, কতটা বেড আছে তাও জানাতে বলা হয়েছে।
সোমবার (০৮ জুন) এই নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট। এর আগে গণমাধ্যমে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য মতে জানা যায়, দেশে কোভিড মোকাবিলায় সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে মোট বরাদ্দকৃত আইসিইউর সংখ্যা ৩৯৯। এর মধ্যে ২৫৬টি ঢাকায়, ১৩৪ টি অন্যান্য জেলায়। প্রতিদিন যে হারে রোগী বাড়ছে তাতে প্রয়োজনে আইসিইউ পেতে অপেক্ষা করতে হয় সুস্থ কিংবা মৃত্যুজনিত কারণে সিট খালি হওয়া পর্যন্ত।
আরো জানা যায়, দেশে মোট আইসিইউ শয্যার সংখ্যা প্রায় এক হাজার। এর মধ্যে ঢাকায় প্রায় চারশতাধিক ও ঢাকার বাইরে বাকি ছয়’শ। অথচ অধিকাংশ কাজ শেষ করেও চালুর অপেক্ষায় বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে প্রায় ৪০টি আইসিইউ।
এই তথ্য থেকে জানা যায়, দেশে আঠারো কোটি মানুষের বিপরীতে আইসিইউ আছে মাত্র ১ হাজারটি।
করোনার উপসর্গ নিয়ে বিনা চিকিৎসায় কেউ মারা গেলে তা হবে ফৌজদারি অপরাধ, চিকিৎসায় অবহেলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
দুপুরে এ সংক্রান্ত কয়েকটি রিটের শুনানি শেষে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
একই সঙ্গে প্রতিদিন কোভিড ও নন কোভিড হাসপাতালে কতজন রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে সে বিষয়টি স্বাস্থ্য বুলেটিনে জানাতে বলা হয়েছে। অক্সিজেনের খুচরা বিক্রি বন্ধসহ আরো ৮ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন উচ্চ আদালত। সবাইকে চিকিৎসা দেয়ার সরকারের নির্দেশনা মানা হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে ৩০ জুন একটি প্রতিবেদন প্রদানে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আদেশে আইসিইউ মনিটরিং এর জন্য হটলাইন চালুর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। করোনা রোগীদের জন্য বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ ভাড়া যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার জন্য ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের একাধিক ওয়ার্ড এবং তিন জেলার বিভিন্ন এলাকাকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। করোনা প্রতিরোধে গঠিত কেন্দ্রীয় টেকনিক্যাল কমিটির গতকাল শনিবারের সভায় এসব এলাকাকে চিহ্নিত করা হয়। সভার একটি কার্যবিবরণী থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
সভার সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, জেলার জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন এবং পুলিশ সুপার মিলে এসব জোনের মধ্যে সুনির্দিষ্টভাবে লাল এলাকা চিহ্নিত করবেন।
ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটির মোট ৪৫টি এলাকাকে ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটির ১৭ এবং দক্ষিণ সিটির ২৮টি এলাকা আছে। আর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকার ১১টি এলাকা রেড জোনের মধ্যে পড়েছে।
ঢাকার বাইরে নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর জেলার একাধিক উপজেলাকে রেড জোন চিহ্নিত করা হয়েছে। গতকাল শনিবার সেন্ট্রাল টেকনিক্যাল গ্রুপের সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে বৈঠকের একটি সূত্র জানিয়েছে।
ঢাকা উত্তর সিটি:
উত্তর সিটি করপোরেশনের যে ১৭ এলাকাকে রেড জোন হিসেবে ধরা হয়েছে সেগুলো হলো: গুলশান, বাড্ডা, ক্যান্টনমেন্ট, মহাখালী, তেজগাঁও, রামপুরা, আফতাবনগর, মোহাম্মদপুর, কল্যাণপুর, গুলশান, মগবাজার, এয়ারপোর্ট, বনশ্রী, রাজাবাজার, উত্তরা, মিরপুর।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি:
দক্ষিণ সিটির ২৮টি এলাকার মধ্যে আছে: যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, মুগদা, গেন্ডারিয়া, ধানমন্ডি, জিগাতলা, লালবাগ, আজিমপুর, বাসাবো, শান্তিনগর, পল্টন, কলাবাগান, রমনা, সূত্রাপুর, মালিবাগ, কোতোয়ালি, টিকাটুলি, মিটফোর্ড, শাহজাহানপুর, মতিঝিল, ওয়ারী, খিলগাঁও, পরিবাগ, কদমতলী, সিদ্ধেশ্বরী, লক্ষ্মীবাজার, এলিফ্যান্ট রোড, সেগুনবাগিচা।
চট্টগ্রাম সিটি:
চট্টগ্রাম সিটির ১০ এলাকাকে রেড জোনের মধ্যে রাখা হয়েছে। সেগুলো হলো, চট্টগ্রাম বন্দরে ৩৭ ও ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড, পতেঙ্গার ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড, পাহাড়তলির ১০ নম্বর ওয়ার্ড, কোতোয়ালির ১৬, ২০, ২১ ও ২২ নম্বর ওয়ার্ড, খুলশীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ড, হালিশহর এলাকার ২৬ নম্বর ওয়ার্ড।
আরও তিন জেলা:
ঢাকার বাইরের তিন জেলার মধ্যে গাজীপুরের সব কটি উপজেলাকে রেড জোনের আওতার মধ্যে আনা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার, রূপগঞ্জ, সদর এবং পুরো সিটি এলাকাকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
ঢাকার দুই সিটি ও চট্টগ্রামের যেসব এলাকায় প্রতি এক লাখ জনসংখ্যায় ১৪ দিনে ৬০ জন আক্রান্ত হয়েছে সেসব এলাকাকে রেড জোন চিহ্নিত করা হয়েছে। ঢাকার বাইরে এই অনুপাত লাখে ১০।
নারায়ণগঞ্জ জেলার সিভিল সার্জন ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, বাস্তব পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সিদ্ধান্ত নেব কোন এলাকার কোন অঞ্চলকে রেড জোন করা হবে। পুরো অঞ্চলকে লকডাউন করা সম্ভব না। যে পয়েন্টে রোগী সংখ্যা বেশি সেটিকে চিহ্নিত করা হবে। সিভিল সার্জন বলেন, রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজারে এখন সংক্রমণ বাড়ছে। তবে সিটি এবং সদরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।
নারায়ণগঞ্জ সিটির মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী অবশ্য মনে করেন, সিটি এলাকার পুরোটাই এখন লকডাউন করা উচিত বলেন মনে করেন তিনি।
আর নরসিংদীর সদর মডেল থানা, মাধবদী ও পলাশ এলাকা।
গতকালের সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় টেকনিক্যাল গ্রুপ তাদের এলাকায় রেড জোন চিহ্নিত করতে সহযোগিতা করবে। এ ছাড়া তারা স্থানীয় প্রশাসনের সিদ্ধান্তগুলো পর্যবেক্ষণ করবেন। গতকাল টেকনিক্যাল কমিটির সভায় সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ। তবে সিদ্ধান্তের ব্যাপারে জানতে ফোন করলে তিনি ফোন ধরেননি।
কেন্দ্রীয় টেকনিক্যাল গ্রুপের সদস্য ও সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক মীরজাদি সেব্রিনা প্রথম আলোকে বলেন, কিছু কিছু এলাকা নির্দিষ্ট করা হচ্ছে। ঢাকার এলাকাগুলোতে আমরা সহযোগিতা করছি। কিন্তু নির্দেশনা হচ্ছে, সিভিল সার্জন মহোদয়েরা নিজেরাই ঘোষণা করবেন। আমরা তাদের সহযোগিতা করব। এটা স্থানীয়ভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। স্থানীয়ভাবে সিদ্ধান্ত হওয়াটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’
গতকালের সভায় রেড জোনের আওতায় যেসব এলাকাকে ফেলা হয়েছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে মীরজাদী সেব্রিনা বলেন, ‘এই তালিকা কিন্তু আমরা প্রকাশ করিনি।’ ঢাকা উত্তর সিটির ১৭ এলাকার একটি তালিকা রেড জোনের এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করার বিষয়টি দাপ্তরিকভাবে এখনো তাঁকে জানানো হয়নি বলে জানান উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম। তবে তিনি মন্ত্রণালয় মারফত বিষয়টি জানতে পেরেছেন। আতিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ১৭টি এলাকার বিষয়টি জেনেছি। কিন্তু এখানে যেসব এলাকার কথা বলা হয়েছে সেগুলো সুনির্দিষ্ট করে দিতে হবে। যেমন আগে বলা হয়েছিল রাজাবাজার। পরে দেখা গেল, শুধু পূর্ব রাজাবাজারকে লকডাউন করতে হবে। এখন কোনো এলাকা যদি রেড জোনের মধ্যে ফেলে তা লকডাউন করতে হয় তবে আমাকে অন্তত ৪৮ ঘণ্টা সময় দিতে হবে। কারণ আমাদের প্রস্তুতির দরকার আছে।’
ঢাকা উত্তর সিটির পূর্ব রাজাবাজের গত ৯ জুন রাত ১২টা থেকে লকডাউন শুরু হয়েছে। এ ছাড়া গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার তিনটি ওয়ার্ড, মাধবদীর বিরামপুর এলাকা ও পলাশের চরসুন্দর এলাকা এখন লকডাউন আছে। সূত্রঃ প্রথম আলো
ধর্মবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আব্দুল্লাহ ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আজ শনিবার দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।
প্রতিমন্ত্রীর মৃত্যুর খবর প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন তাঁর সহকারী একান্ত সচিব শেখ নাজমুল হক। প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অসুস্থবোধ করায় আজ রাতে প্রতিমন্ত্রীকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নেওয়া হয়। সেখানে রাত পৌনে ১২টার দিকে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, শেখ মো. আব্দুল্লাহ ১৯৪৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জ জেলার মধুমতী নদীর তীরবর্তী কেকানিয়া গ্রামের জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম মতিউর রহমান এবং মা রাবেয়া খাতুন। চার ভাই তিন বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। তিনি স্থানীয় গওহরডাঙ্গা হাফেজিয়া মাদ্রাসায় পবিত্র কোরআন হেফজের মাধ্যমে শিক্ষাজীবন শুরু করেন। এর পর একই মাদ্রাসার কওমী ধারায় পড়াশুনা করেন। তিনি সুলতানশাহী কেকানিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা এবং সুলতানশাহী কেকানিয়া হাই স্কুল থেকে ১৯৬১ সালে মেট্রিক পাসের মাধ্যমে মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। তিনি খুলনার আযম খান কলেজ থেকে ১৯৬৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক, ১৯৬৬ সালে বিকম (অনার্স) ডিগ্রী সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭২ সালে এম.কম. এবং ১৯৭৪ সালে অর্থনীতিতে এম.এ ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৭৭ সালে ঢাকা সেন্ট্রাল ‘ল’ কলেজ থেকে এলএলবি ডিগ্রী অর্জন করেন।
শেখ মো. আব্দুল্লাহ ছাত্রজীবনেই রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। তিনি খুলনার আযম খান কমার্স কলেজে প্রথম ভিপি নির্বাচিত হন। গত শতকের ষাটের দশকে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তানে ছয়দফার উত্তাল আন্দোলন চলছিল । এ সময় ১৯৬৬ সালের ছয়দফা আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধুর সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে রাজনীতিতে গভীরভাবে সম্পৃক্ত হন। যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মনির নেতৃত্বে তিনি আওয়ামী যুবলীগে যোগদান করেন । এ সময় তিনি বঙ্গবন্ধুর সরাসরি তত্ত্বাবধানে গঠিত গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি কেন্দ্রীয় আওয়ামী যুবলীগের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। এরপর ১৯৭০ এর নির্বাচনে স্থানীয় রাজনীতিতে জড়িত হয়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামীলীগের ব্যাপক নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফ্রন্ট মুজিব বাহিনীর সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন শেখ মো. আব্দুল্লাহ। বাঙ্গালীর স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হলে তিনি মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কিন্তু রাজনৈতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে দেশ সেবা করার লক্ষ্যে চাকরির পরিবর্তে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং তাঁর নেতৃত্বে রাজনীতি করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এরপর কাউন্সিলের মাধ্যমে গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। দীর্ঘদিন তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জাতীয় পর্যায়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
শেখ মো. আব্দুল্লাহ ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। বিভিন্ন শিক্ষা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতাও প্রদান করেছেন। তিনি অসংখ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা এবং পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ধর্মীয় ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখে আসছেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে শেখ মো. আব্দুল্লাহ ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন।
জাতীয় চার নেতার অন্যতম ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর ছেলে ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে একজন বিশ্বস্ত সহযোদ্ধাকে হারালাম।
রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে টানা নয় দিন ধরে লাইফ সাপোর্টে থাকা নাসিমকে শনিবার বেলা ১১টার দিকে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পিতার মতোই মোহাম্মদ নাসিম আমৃত্যু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে ধারণ করে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করে গেছেন। সকল ঘাত-প্রতিঘাত উপেক্ষা করে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রতিষ্ঠায় তিনি অনন্য অবদান রেখেছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে বাংলাদেশ একজন দেশপ্রেমিক ও জনমানুষের নেতাকে হারাল। আমি হারালাম একজন বিশ্বস্ত সহযোদ্ধাকে।’
প্রধানমন্ত্রী তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
করোনা মহামারি কি মৃত্যুর প্রতি ঐতিহ্যগত আচরণের দিকেই আমাদের নিয়ে যাচ্ছে নাকি মানব আয়ু দীর্ঘায়িত করার প্রচেষ্টাকেই আরও জোরদার করবে?
মানুষ মৃত্যুকে ছাপিয়ে বিভিন্ন সমস্যাকে পরাজিত করতে পারবে—এমন বিশ্বাসের উপর ভর করেই আজকের আধুনিক পৃথিবী গড়ে উঠেছে। সেটা ছিল একেবারে নতুন বৈপ্লবিক মনোভাব। ইতিহাসের অধিকাংশ সময়ে মানুষ মৃত্যুর কাছে নিজেকে বিনম্রভাবে সঁপেছিল। আধুনিক যুগ অব্দি অধিকাংশ ধর্ম ও মতাদর্শ মৃত্যুকে শুধুমাত্র আমাদের অনিবার্য নিয়তিই নয়, জীবনের মূল অর্থ হিসেবেই বিবেচনা করেছে। মানব অস্তিত্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী সংগঠিত হত আপনার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের পর। মৃত্যুর ঠিক পরেই আপনি আপনার জীবনের নিগূঢ় সত্য সম্পর্কে জেনেছিলেন। একমাত্র তখনই ভোগ করত অনন্ত সুখ অথবা অনন্ত নরক। ইতিহাসের বেশিরভাগ সময়েই সবেচেয়ে জ্ঞানী মানবেরা মৃত্যুকে অর্থময় করে তোলা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, তাকে পরাজিত করার চেষ্টায় নয়।
গিলগামেশের মহাকাব্য, অরফিয়ুস ও ইউরিডিসের মিথ, এবং অসংখ্য গ্রন্থ ও কাহিনি সকল পীড়িত মানুষকে এটাই স্থিরভাবে বুঝিয়েছে যে, আমরা মৃত্যুবরণ করি ঈশ্বরের নির্দেশে, অথবা বিশ্বব্রহ্মান্ড অথবা ধরণীমাতার ফরমানে এবং আমরা যেন সেই অদৃষ্ট মেনে নেই কৃপা ও দয়াপরবশ হয়ে। কোনদিন হয়ত ঈশ্বর যীশুক্রিস্টের দ্বিতীয় আগমনীর মত মহাজাগতিক কাণ্ড ঘটিয়ে মৃত্যুকে নিশ্চিহ্ন করবেন। কিন্তু নিশ্চিতভাবেই এমন সুসংবদ্ধ বিপ্লব ঘটানোর মত কাজ রক্ত-মাংসের মানুষের কর্মপরিধির ঊর্ধ্বে ছিল।
এরপর ঘটল বৈজ্ঞানিক বিপ্লব। বিজ্ঞানীদের জন্য মৃত্যু কোন স্বর্গীয় ফরমান নয়— নিছক একটি যান্ত্রিক সমস্যা। ঈশ্বর চেয়েছেন বলে মানুষ মৃত্যুবরণ করে না বরং কিছু যান্ত্রিক ত্রুটির দরুণ তা হয়ে থাকে। হৃৎপিণ্ড রক্ত সঞ্চালন বন্ধ করে দেয়। ক্যান্সার ধ্বংস করে দেয় যকৃত। ফুসফুসে বহু গুণে বৃদ্ধি পায় ভাইরাস। এ সমস্ত যান্ত্রিক সমস্যাগুলোর জন্য তাহলে দায়ী কী? অন্যান্য যান্ত্রিক সমস্যাবলি। হৃৎপিণ্ড রক্ত সঞ্চালন বন্ধ করে দেয় কারণ হৃৎপিণ্ডের পেশীতে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছায় না বলে। ক্যান্সার আক্রান্ত কোষ যকৃতে ছড়িয়ে পড়ে কিছু সুযোগী জেনেটিক পরিবর্তনের কারণে। ভাইরাস আমার ফুসফুসে বাসা বাঁধে কারণ বাসে যাত্রাকালে কেউ হাঁচি দিয়েছিল। এ নিয়ে আধ্যাত্মিকতার কিছু নেই।
এবং বিজ্ঞান বিশ্বাস করে প্রত্যেক যান্ত্রিক সমস্যার একটি যান্ত্রিক সমাধান আছে। গবেষণাগারে দুই-এক বিজ্ঞানীই এই কাজটি করতে পারে। যেখানে চিরাচরিতভাবে মৃত্যু ছিল কিছু কালো আলখেল্লা পরিহিত যাজক ও ধর্মতাত্ত্বিকদের বিশেষ কারবার, এখন সেই কাজ সাদা ল্যাব পোশাক পরিহিত কিছু মানুষের উপর বর্তেছে। যদি হৃৎপিণ্ড অতিরিক্ত স্পন্দিত হতে থাকে তবে আমরা তা পেইসমেকার দিয়ে সচল করতে পারি কিংবা আরেকটি নতুন হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন করতে পারি। যদি ক্যান্সার তাণ্ডব শুরু করে তবে আমরা তা বিকিরণের মাধ্যমে নিশ্চিহ্ন করতে পারি। যদি ফুসফুসে ভাইরাস ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পায় তবে নতুন কোনো ঔষধ দিয়ে দমন করতে পারি।
এটা সত্য যে, বর্তমানে আমরা সব যান্ত্রিক সমস্যার সমাধান করতে পারি না। কিন্তু আমরা সে লক্ষ্যে কাজ করছি। মানুষের চিন্তাশীল মনমানসিকতা এখন আর মৃত্যুর অর্থ উদ্ধারে সময় ব্যয় করে না। তার বদলে তারা জীবনের আয়ুষ্কাল বাড়ানোর কাজে ব্যস্ত। তারা রোগ ও বয়োবৃদ্ধির জন্য দায়ী অণুজৈবিক, শারীরবৃত্তীয় ও জেনেটিক কারণ উদঘাটন করছে এবং নতুন ঔষধ ও বিপ্লবিক সব চিকিৎসাবলি উদ্ভাবন করছে ।
আয়ুষ্কাল বৃদ্ধির এই প্রচেষ্টায় মানুষ লক্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে। গত দুই শতাব্দীতে সারাবিশ্বে মানুষের গড় আয়ু চল্লিশ বছরের কম থেকে বেড়ে ৭২-এ উন্নীত হয়েছে এবং ৮০’র অধিক হয়েছে কিছু উন্নত দেশসমূহে। বিশেষত মৃত্যুর থাবা থেকে শিশুরা পেয়েছে মুক্তি। বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত, কমপক্ষে এক তৃতীয়াংশ শিশু পরিণত বয়সের গণ্ডি পৌঁছুতে পারত না। সকল শিশুই আমাশয়, হাম ও গুটিবসন্তের মত শিশুদের রোগে নতি স্বীকার করত নিয়মিতভাবেই। ১৭ শতকের ইংল্যান্ডে প্রতি ১০০০ জন সদ্য জন্ম নেয়া শিশুদের মধ্যে ১৫০ জনই তাদের জন্মের প্রথম বছরেই মারা যেত এবং মাত্র ৭০০ জন ১৫ বছর বয়স পূর্ণ করতে পারত। বর্তমানে প্রতি ১০০০ জনে মাত্র পাঁচজন ইংরেজ শিশু তাদের জন্মের প্রথম বছরে মারা যায় এবং ৯৯৩ জন তাদের ১৫ তম জন্মবার্ষিকী পালন করে। সমগ্র পৃথিবীতে শিশু মৃত্যুর হার এখন ৫ শতাংশেরও নিচে।
জীবন রক্ষা ও আয়ুষ্কাল বৃদ্ধির ক্ষেত্রে মানুষ যে অসামান্য সফলতা দেখিয়েছে তার ফলস্বরূপ আমাদের বিশ্ববীক্ষারও ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। যেখানে আমাদের চিরাচরিত ধর্মগুলো মৃত্যু-পরবর্তী অধ্যায়কে জীবনের অর্থের মূল আধার বলে বিবেচনা করত, সেখানে ১৮ শতক থেকেই উদারনীতি, সমাজতন্ত্র ও নারীবাদের মত মতাদর্শগুলো এই মৃত্যু-পরবর্তী জীবন নিয়ে নিরুৎসাহিত ছিল। মৃত্যুর পর একজন কমিউনিস্টের সাথে আসলে কী ঘটে? একজন পুঁজিবাদের ক্ষেত্রে কী ঘটে? অথবা একজন নারীবাদীর? এ নিয়ে কার্ল মার্ক্স, এডাম স্মিথ অথবা সিমন দ্য ব্যুভোয়ারের লেখায় উত্তরটি খুঁজতে যাওয়া অর্থহীন।
একমাত্র আধুনিক মতাদর্শ যা এখনো মৃত্যুকে কেন্দ্রীয় ভূমিকায় গুরুত্বারোপ করে, তা হল জাতীয়তাবাদ। এর কাব্যিক ও দুর্দান্ত মুহূর্তে জাতির জন্য যে প্রাণ নিবেদন করে সে জাতীয় চেতনায় অমর হয়ে থাকে, জাতীয়তাবাদ এমন প্রতিজ্ঞা করে। তবে এই প্রতিজ্ঞা এতই অস্পষ্ট যে, অনেক জাতীয়তাবাদীই প্রকৃত অর্থে জানেন না এর দ্বারা কী সাধন হয়। আপনি স্মৃতিতে কীভাবে প্রকৃতপক্ষে ‘বেঁচে’ থাকেন? যখন আপনি মৃত, তখন আপনি কীভাবে জানবেন মানুষ আপনাকে মনে রাখল কি রাখল না? উডি এলেনকে একবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তিনি সিনেমাপ্রেমীদের স্মৃতিতে বেঁচে থাকতে চান কিনা। এলেন উত্তরে বলেছিলেন: ‘আমি বরং আমার অ্যাপার্টমেন্টে বাস করতে চাই’। এমনকি অনেক চিরাচরিত ধর্মগুলোও মনোযোগের কেন্দ্র পরিবর্তন করেছে। মৃত্যু-পরবর্তী জীবনে স্বর্গলাভের প্রতিজ্ঞার চেয়ে এই ইহজীবনে আপনার জন্য তারা কী করতে পারে সে বিষয়ে অধিক গুরুত্ব দেয়া শুরু করেছে।
করোনাভাইরাস কি মৃত্যুর প্রতি আমাদের আচরণগত পরিবর্তন আনবে? সম্ভবত না, বরং তার উল্টো। সম্ভবত মানুষের জীবন সুরক্ষার প্রচেষ্টাগুলো আরও দ্বিগুণ করার কারণ হবে কোভিড-১৯। সমাজের প্রভাব বিস্তারকারী সাংস্কৃতিক প্রতিক্রিয়া, কোভিড-১৯ এর কাছে নতি স্বীকার করে না—বরং এটি ক্রোধ ও আশার একটি সংমিশ্রণ।
প্রাক-আধুনিক সমাজে যেমন মধ্যযুগের ইউরোপে যখন কোনো প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ত, মানুষ অবশ্যই নিজের জীবন নিয়ে শঙ্কাগ্রস্ত ছিল এবং প্রিয়জনের মৃত্যুতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ত, কিন্তু প্রতিক্রিয়াস্বরূপ প্রাদুর্ভাবের কাছে সকলেই নতি স্বীকার করত। মনোবিজ্ঞানীরা একে বলতে পারেন ‘রপ্তকৃত অসহায়ত্ব’।
আমাদের আজকের মনোভাব সম্পূর্ণ বিপরীত। যখনি কোন রেল দুর্ঘটনা, বহুতল ভবনে আগ্নিকাণ্ড, এমনকি ঘূর্ণিঝড়ের মত বিপর্যয়ে অগণিত মানুষ মারা যায়— আমরা একে প্রতিরোধযোগ্য মানব ব্যর্থতা বলে মনে করি—আমরা ভাবি না এটা ঐশ্বরিক শাস্তি কিংবা অনিবার্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ। রেল কোম্পানি যদি নিরাপত্তা বাজেট ঠিকমত ব্যয় করত, মিউনিসিপ্যালিটি যদি আরও উন্নত অগ্নি বিধান গ্রহণ করত, এবং সরকার যদি দ্রুত সাহায্য পাঠাতে পারত—তবে এই মানুষগুলোকে বাঁচানো যেত। একবিংশ শতাব্দীতে এমন গণ মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটনের জন্য স্বয়ংক্রিয় ভাবেই মামলা-মোকাদ্দেমা ও তদন্ত হয়ে থাকে।
মহামারীর প্রতিও আমাদের এমন মনোভাব বিদ্যমান। বর্তমানে এইডস, ইবোলা ও অন্যান্য সাম্প্রতিক প্রাদুর্ভাবগুলোকে সাংগঠনিক ব্যর্থতা বলেই ভাবা হয়। আমরা এটা ভেবে নেই যে, এমন মহামারী ঠেকাতে পর্যাপ্ত জ্ঞান ও কৌশল মানুষের আছে। যদি কোন রোগ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তবে তা মানুষের অযোগ্যতার কারণেই হয়ে থাকে, কোন স্বর্গীয় আক্রোশ থেকে নয়। কোভিড-১৯ এর ব্যতিক্রম কিছু নয়। সংকটের সমাধান এখনো অনেক দূর, কিন্তু এখনি একে অপরের দোষারোপ শুরু হয়ে গেছে। এক দেশ আরেক দেশকে অভিযুক্ত করছে। প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিকেরা একে অপরের ঘাড়ে পিনখোলা গ্রেনেড ছুঁড়ে দেয়ার মত অভিযোগের তীর ছুঁড়ছে।
ক্রোধের পাশাপাশি অগাধ আশার আলোও আছে। মৃতদেহ সৎকার করছে ও দুর্যোগ থেকে ক্ষমাপ্রার্থী ধর্ম প্রচারকেরা এখন আর আমাদের নায়ক নয়, বরং আমাদের নায়ক হল স্বাস্থ্যকর্মীরা যারা জীবন বাঁচাচ্ছে। আর আমাদের মহানায়ক হল গবেষণাগারের সেইসব বিজ্ঞানীরা। সিনেমাপ্রেমীরা জানে, স্পাইডারম্যান ও ওয়ান্ডারওম্যান পরিশেষে ভিলেনকে হারাবে এবং পৃথিবী রক্ষা করব; সেভাবে আমরাও নিশ্চিত যে কয়েক মাস কিংবা বছরের মধ্যেই বিজ্ঞানীরা কোভিড-১৯-এর কার্যকর চিকিৎসা উদ্ভাবন করে ফেলবে এমনকি ভ্যাক্সিনও। এরপর করোনাভাইরাসকে আমরা দেখিয়ে দেবো কে এই গ্রহের শ্রেষ্ঠ জীব? হোয়াইট হাউস থেকে শুরু করে ওয়াল স্ট্রিট হয়ে ইতালির ব্যালকনি পর্যন্ত, সকলের কণ্ঠে একই প্রশ্ন উচ্চারিত হচ্ছে: ‘কবে নাগাদ ভ্যাক্সিন প্রস্তুত হবে?’ কবে? কোন ধরনের যদিবা কিন্তু নেই এই প্রশ্নে।
যখন ভ্যাক্সিন প্রস্তুত হবে ও মহামারি শেষ হবে, মানবজাতি এই মহামারি থেকে কী শিক্ষা নেবে? সব মিলিয়ে বলা যায়, জীবনের সুরক্ষায় আমাদের প্রচেষ্টা আরও জোরদার করতে হবে। আমাদের আরও অনেক হাসপাতাল, চিকিৎসক ও সেবাকর্মীর প্রয়োজন হবে। আমাদের মজুত করতে হবে আরও অনেক শ্বাস-প্রশ্বাস সহায়ক যন্ত্র, সুরক্ষা পোশাক, টেস্টিং যন্ত্র। অজানা জীবাণুর গবেষণা ও নতুন নতুন চিকিৎসা উদ্ভাবনের পেছনে আরো অর্থ লগ্নি করতে হবে আমাদের। পুনরায় অরক্ষিত থাকা মোটেও উচিৎ হবে না আমাদের।
অনেকে যুক্তির নিরিখে এও বলতে পারেন যে এই শিক্ষাটা ভুল। এই সংকট থেকে আমাদের নিরহংকারী হবার শিক্ষা নেয়া উচিৎ। প্রকৃতির ক্ষমতা দমনের ব্যাপারে আমাদের সামর্থ্য নিয়ে অতি আত্মবিশ্বাসী হবার কিছু নেই। এমন সমালোচকদের অধিকাংশই মধ্যযুগীয় চিন্তাভাবনার ধারক। তারা সকল প্রশ্নের উত্তর জানে এ ব্যাপারে নিশ্চিত মনোভাব নিয়ে নিরহংকারী হবার প্রাচারণা চালায়। কিছু ধর্মান্ধ নিজেদের বিরত রাখতে পারে না—ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্ত্রীসভায় সাপ্তাহিক বাইবেল পাঠ পরিচালনা করেন এক যাজক বলেই বসেছেন এই মহামারি হল সমকামীদের জন্য ঐশ্বরিক শাস্তি। কিন্তু আজকাল এমন ধর্মীয় চিন্তকদের অনেকেই ধর্মগ্রন্থের চেয়ে বরং বিজ্ঞানেই বেশি আস্থা রাখেন।
ক্যাথলিক চার্চ সকল বিশ্বাসীদের চার্চে আসা থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দিয়েছে। ইসরায়েল তার সব সিন্যাগগ (ইহুদিদের ধর্মীয় উপাসনালয়) বন্ধ করে দিয়েছে। ইরানের ইসলামিক প্রজাতন্ত্র জনগণকে মসজিদে আসতে মানা করেছে। সকল মন্দির ও ধর্মীয় শাখা-প্রশাখা গণজমায়েতের অনুষ্ঠানসমূহ বাতিল করেছে। এসবের একমাত্র কারণ: বিজ্ঞানীরা অনুসন্ধান করে সকল পবিত্র স্থান বন্ধের সুপারিশ করেছেন।
মানুষের ঔদ্ধত্য নিয়ে যারা বারবার হুঁশিয়ার করছে তাদের সকলেই মধ্যযুগে ফিরে যাবার স্বপ্ন দেখে না। এমনকি বিজ্ঞানীরাও একমত আমরা যেন আমাদের প্রত্যাশার ব্যাপারে বাস্তববাদী হই এবং চিকিৎসকদের প্রতি এই অন্ধ বিশ্বাস যেন না রাখি যে তারা আমাদের সকল দুর্দশা দূর করে দেবে। মানবতা সামষ্টিকভাবে অনেক শক্তিশালী হলেও, ব্যক্তি পর্যায়ে আমাদের দুর্বলতাগুলো এখনো নিজেকেই মোকাবেলা করতে হবে। দুই-এক শতাব্দীর মধ্যেই বিজ্ঞান হয়তো আমাদের জীবনের আয়ু বৃদ্ধি করতে সক্ষম হবে, কিন্তু এখনই নয়। গুটিকয়েক সম্পদশালী ছাড়া আজকে যারা বেঁচে আছি তাদের সকলেই একদিন মারা যাব এবং সকলেই প্রিয়জন হারাব। আমাদের এই নশ্বর পৃথিবী মেনে নিতে হবে।
এখন মানুষ বিজ্ঞানকে তার বিকল্প প্রতিরক্ষা কৌশল হিসেবে বেছে নিয়েছে, তারা ভাবে চিকিৎসক তাকে সবসময় বাঁচিয়ে তুলবে এবং তারা সবসময় তাদের অ্যাপার্টম্যান্টেই বসবাস করবে। এক্ষেত্রে আমাদের ভারসাম্যপূর্ণ মনোভাব প্রয়োজন। মহামারি মোকাবিলার জন্য আমাদের আস্থা রাখা উচিৎ বিজ্ঞানে কিন্তু ব্যক্তিগত নশ্বরতার যত দায়-দায়িত্ব তা নিজে নিজেই মোকাবিলা করা উচিৎ।
বর্তমান এই সংকট আমাদেরকে মানবজীবন ও মানব অর্জনের অস্থায়িত্ব সম্পর্কে আরও সচেতন করে তুলছে। হতে পারে আধুনিক সভ্যতা পুরোপুরি বিপরীত দিকেই যাত্রা করছে। আমাদের ভঙ্গুরতার নিরিখে হয়তো আমরা আরও শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাই কায়েম করব। এই সংকট যখন কেটে যাবে, আমি মনে করি না দর্শন বিভাগের জন্য অর্থ বয়াদ্দ আরও বেড়ে যাবে। কিন্তু বাজি ধরে বলতে পারি মেডিক্যাল স্কুল ও স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নের জন্য ব্যাপক হারে বাজেট বৃদ্ধি পাবে।
মানুষ সর্বোচ্চ প্রত্যাশা এটাই। সরকারগুলো কোনভাবেই দর্শনে ভাল নয়। এটা তাদের ক্ষেত্র নয়। ব্যক্তি মানুষেরই দরকার উন্নত দর্শনের চর্চা করা। চিকিৎসকেরা আমাদের অস্তিত্বের জট খুলতে পারেন না। কিন্তু তারা আমাদের এই ধাঁধার জট খুলতে আরও অনেক সময় দিতে সাহায্য করতে পারেন। সেই বাড়তি সময় নিয়ে আমরা কী করব তা সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমাদের ওপর।
মাইকেল কারবেরির অভিযোগের সঙ্গে এটির কোনও সম্পর্ক আছে কি না তা হয়তো বলা যাচ্ছে না। তবে ইংল্যান্ডের ১৮ টি প্রথম শ্রেণির কাউন্টি দলের মধ্যে আজই প্রথম দল হিসেবে একজন অশ্বেতাঙ্গ ক্রিকেট কোচ পেলো সারে। কৃষ্ণাঙ্গ, এশিয়ান ও জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠী থেকে প্রথম নিয়োগ পাওয়া এই কোচের নাম বিক্রম সিং সোলাঙ্কি। ভারতীয় বংশোদ্ভুত ৪৪ বছর বয়সী সোলাঙ্কি ২০০০ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে ৫১ ওয়ানডে ও ৩টি টি-২০ ম্যাচ খেলেছেন ইংল্যান্ডের হয়ে
ইংল্যান্ডের হয়ে ৬ টেস্ট, ৬ ওয়ানডে ও ১টি টি-২০ ম্যাচ খেলা মাইকেল কারবেরি ইংলিশ কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপে খেলেছেন সারে, হ্যাম্পশায়ার ও লেস্টারশায়ারের হয়ে। দুদিন আগে ক্যারিবীয় বংশোদ্ভুত এই ইংলিশ ক্রিকেটার বলেছেন কাউন্টিতে খেলার সময় বিভিন্নভাবে কোচদের বর্ণবৈষম্যমূলক আরচরণের শিকার হয়েছেন। আর বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন বলেই লম্বা হতে পারেনি তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার।
কারবেরির অভিযোগের পর নড়েচড়ে বসেছে ইংলিশ অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)। আজ শুক্রবারই বিষয়টি নিয়ে সভায় বসেছিল ইসিবির নির্বাহী বোর্ড। সিদ্ধান্ত হয়েছে যে এ ব্যাপারে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নেতা ও প্রভাবশালী কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিদের কাজে লাগানো হবে। ‘সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আমরা ধৈর্য ধরে তাদের কথা শুনেছি যারা শুধু কালো হওয়ার কারণে ক্রিকেট, খেলা ও সমাজে বাজে অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে গেছেন। আমরা জানি যে দেশের নানা ক্ষেত্র ও প্রতিষ্ঠানে বর্ণবাদ কোনও না কোনওভাবে থেকে গেছে এবং আমরা এও জানি যে আমাদের খেলাধুলাও এ থেকে মুক্ত নয়। খেলাটির প্রতিটি স্তরে অর্থবহ এবং দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তন আনতে আমরা তাই সামগ্রিকভাবে দৃঢ়চিত্তে কাজ করে যেতে চাই’-ইসিবির বিবৃতিতে বলা হয়েছে এই কথা।
কারবেরি অবশ্য এই উদ্যোগে খুব উৎসাহিত নন, বর্ণবৈষম্যবিরোধী লড়াইয়ে ইসিবির কাছে কোনও প্রত্যাশাও তার নেই, কারণ খেলাটির মধ্যে এটি বিরাজ করছে প্রবলভাবে। ‘তারা হয়তো ছবি প্রকাশ করে বলতে চাইবে, “আমরা বর্ণবাদী নই, এই যে দেখো বিশ্বকাপ জয়ের পর জফরা আর্চার ও আদিল রশিদ আলিঙ্গন করছে”। কিন্তু আসল ছবি অন্যরকম’-বলেছেন ইংল্যান্ডের সাবেক ওপেনিং ব্যাটসম্যান।
বিশ্বে প্রতিদিন নতুন শনাক্ত হওয়া করোনা রোগীর সংখ্যা বিষয়ক তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান এখন ৯ নম্বরে। তবে শুক্রবার (১২ জুন) রাত ১০টায় এই তালিকার সপ্তম অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। পরে রাত ১২টা ২০ মিনিটে ওয়ার্ল্ডো মিটারের আপডেট হওয়া এই তালিকায় ব্রাজিল ও চিলি যুক্ত হওয়ায় ২ ধাপ নিচে নেমে আসে বাংলাদেশ।
নতুন শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যার শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, রাশিয়া, চিলি, পাকিস্তান, মেক্সিকো, সৌদি আরব ও ব্রাজিল। এশিয়ার মধ্যে নতুন শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান চার নম্বরে। এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে ভারত, পাকিস্তান ও সৌদি আরব।
অ্যাকটিভ কেসের অর্থাৎ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বিষয়ক তালিকায় বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান সাত নম্বরে। বাংলাদেশে মোট অ্যাকটিভ কেসের সংখ্যা ৬৩ হাজার ১৭৯ জন। এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে অ্যাকটিভ কেসের সংখ্যা ১১ লাখ ৬০ হাজার ৮৯৩ জন।
অ্যাকটিভ কেসের ক্ষেত্রে এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে ভারত (১ লাখ ৪৪ হাজার ৮৩৮) এবং পাকিস্তান (৮৩ হাজার ২২৩)।
অ্যাকটিভ কেস বলতে মোট শনাক্তের মধ্যে সুস্থ হওয়াদের বাদ দিয়ে এখন যারা আক্রান্ত আছেন তাদেরকে অ্যাকটিভ কেস বলে ধরা হয়।
দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ৯৭তম দিনে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু ও সর্বাধিক করোনা রোগী শনাক্তের সংবাদ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, গত চারদিন ধরে দেশে প্রতিদিন রোগী শনাক্ত হচ্ছেন তিন হাজারের বেশি। গত ৯ জুন শনাক্ত ছিল তিন হাজার ১৭১ জন, ১০ জুন ছিল তিন হাজার ১৯০ জন, ১১ জুন ছিল তিন হাজার ১৮৭ জন আর আজ ১২ জুন তিন হাজার ৪৭১ জন রোগী শনাক্ত হবার কথা জানিয়েছে সরকারি এই প্রতিষ্ঠান। এদিন দেশে সর্বোচ্চ মৃত্যুর খরবও দেয় তারা। গত ১৮ মার্চ প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী মারা যায়, আর গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৪৬ জন।
এই নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত হলেন ৮১ হাজার ৫২৩ জন আর মোট মারা গেলেন এক হাজার ৯৫ জন। পাশাপাশি এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন মোট ১৭ হাজার ২৪৯জন। গত আট মার্চ দেশে প্রথম করোন আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হন তিনজন। শুরুর দিকে করোনা পরীক্ষা কেবলমাত্র রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) হলেও বর্তমানে দেশের সরকারি বেসরকারি মিলিয়ে ৫৯টি পরীক্ষাগারে করোনার নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে। তবে যত রোগী শনাক্ত হচ্ছেন তার বাইরেও অসংখ্য রোগী রয়েছে বলে জানিয়েছে বিশেষজ্ঞরা। একইসঙ্গে করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির সংখ্যাও কম নয়।
বাংলাদেশ পরবর্তী এপি সেন্টার কিনা জানতে চাইলে আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটা কেবল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাই বলতে পারবে, তবে তারা বলেছে এখানে রোগী সংখ্যা বাড়ছে। দক্ষিণ আমেরিকা এবং দক্ষিণ এশিয়াতে রোগী সংখ্যা বাড়ছে, তবে দক্ষিণ এশিয়াতে এখনও এক্সপ্লোশন অব এপিডেমিক হয়নি। তবে আশঙ্কা রয়েছে। পাকিস্তানকে ইতোমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যা পরামর্শ দিয়েছে রোগী সংখ্যা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে।’
তিনি বলেন, ‘জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটিও সুপারিশ করেছে ছোট এলাকা ধরে লকডাউন করলে কিছু হবে না, বড় এলাকা নিয়ে করতে হবে। ভারতের মুম্বাইসহ মহারাষ্ট্রের অবস্থাও খারাপ।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বরাত দিয়ে তিনি জানান, দক্ষিণ আমেরিকা এবং দক্ষিণ এশিয়াতে রোগী সংখ্যা বাড়ছে। দক্ষিণ আমেরিকার মতো এখন দক্ষিণ এশিয়াতে অতোটা খারাপ অবস্থা হয়নি। তবে এভাবে চলতে থাকলে ‘কিন্তু গোয়িং টু বি’।
এক্সপ্লোশন অব এপিডেমিক বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা যদি খুব দ্রুত নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ না নিতে পারি তাহলে রোগী সংখ্যা অনেক বাড়তে পারে। কাজেই হটস্পটের আশঙ্কাতো আছেই। তবে কোনও এলাকাতে ‘এক্সপ্লোশন অব এপিডেমিক’ বা ঘনীভূত মহামারি এখনও দেখা যায়নি, তবে ঢাকাতে জোনিং করা গেলে সেটা হয়তো বিলম্বিত করা যাবে।’
আর এজন্য কঠিন লকডাউনসহ অন্যান্য পদক্ষেপগুলো কঠোরভাবে কার্যকর করতে হবে, নয়তো কোনও উপায় নাই বলেও মন্তব্য করেন মুশতাক হোসেন।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, ‘এই উপমহাদেশ ইতিমধ্যেই এপি সেন্টার হয়ে আছে। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানে প্রতিদিন সংক্রমণের হারও যেমন বেশি তেমনি মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে প্রতিদিন। এ তিন দেশেই অন্যান্য দেশের তুলনায় পরীক্ষা কম হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘করোনার লক্ষণ উপসর্গ নিয়ে যারা মারা যাচ্ছে তাদের তালিকা এতে যোগ হচ্ছে না। যার কারণে প্রকৃত ঘটনার চেয়ে সংখ্যা অনেক কম। তবে এই তিন দেশেই নতুন রোগীর সংখ্যা উর্ধ্বমুখী। সেক্ষেত্রে এ উপমহাদেশ পুরোটাই নতুন এপি সেন্টার, তবে বাংলাদেশের অবস্থা একটু বেশি খারাপ। তবে সাধারণ সূত্র অনুযায়ী যে দেশে মহামারী পরে আসবে সেই দেশ থেকে দূর হবেও দেরিতে। এছাড়া আমরা মোকাবিলা করতে পারছি না, যার কারণে যাবে আরও পরে।’
দেশের কিছু মানুষ সচেতন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন, কিছু মানুষ মানেন না, কিছু আছে তারা বোঝেনই না আসলে কী হচ্ছে মন্তব্য করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কোভিড মোকাবিলার জন্য আমরা বেশি পদক্ষেপ নিতে পারিনি। যা করার দরকার ছিল সেটা করতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘গত ১১ এপ্রিল রোগী শনাক্তের হার ছিল ছয় দশমিক শূন্য সাত এবং ১৭ এপ্রিল ১২ দশমিক ১৪ শতাংশ। এরই ভেতরে পোশাক কারখানা খুলে দেওয়া হলো ২৬ এপ্রিল। তার ১৪ দিন পর ৯ মে রোগী শনাক্তের হার ছিল ১১ দশমিক ৬৩ শতাংশ, ১০ মে সেখান থেকে লাফ দিয়ে হলো ১৫ দশমিক চার শতাংশ। তারপর আবার ২০ মে হলো ১৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ, ২১ মে ১৭ দশমিক ২৭ শতাংশ। তারপর থেকে হার ছিল যথাক্রমে প্রতিদিন ১৭ দশমিক ৪১ শতাংশ, ১৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ, ১৭ দশমিক ১৯ শতাংশ এভাবে বাড়তে লাগলো। কিন্তু ২৫ মে রোগী শনাক্তের হার চলে গেল ২০ এর ঘরে। ২৬ মে ঈদের ছুটিতে মানুষ ঢাকা ছাড়লো। এরপরে গত ৯ জুন হলো ২১ দশমিক ৬৩, ১০ জুন ১৯ দশমিক ৯৮, ১১ জুন ২০ দশমিক ২১ এবং আজ হচ্ছে ২১ দশমিক ৭১।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের রোগী শনাক্তের হার কিন্তু আরও বাড়ার কথা ছিল, কিন্তু সেটা হয়নি। আমরা এখন পিকের চূড়ায় না উঠে সমান্তরালভাবে চলছি। সংক্রমণের হার এরচেয়ে আর বাড়বে না বলেই আমার মনে হয়।’
তিনি জানান, নমুনা সংগ্রহ যদি আরও রেগুলার হতো এবং নমুনা যদি নষ্ট না হতো তাহলে এই হিসাব আরও ভালো পাওয়া যেতো।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, শরীরে মহামারি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ হয় আমাদের হাতের মাধ্যমেই। আর হাত সুরক্ষিত জীবাণুমুক্ত রাখতে আমরা দিনে বহুবার সাবান পানি দিয়ে হাত ধুয়ে নিচ্ছি। ব্যবহার করছি স্যানিটাইজার। এসবের চেয়েও বাইরে বের হলে হাতে গ্লাভস ব্যবহার করা বেশি নিরাপদ।
গ্লাভস ব্যবহারের ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো মাথায় রাখা জরুরি। আসুন জেনে নেই:
• গ্লাভস পরে হয়তো হাতে জীবাণুর লাগবে না, তবে লেগে থাকবে গ্লাভসের গায়ে
• গ্লাভসের সিলিকন, পলিথিন বা রবারের ওপরেই করোনা ভাইরাস দীর্ঘক্ষণ বেঁচে থাকে
• গ্লাভস পরে থাকা অবস্থায় শরীরের খোলা কোনো স্থানে হাত দেবেন না
• গ্লাভস খোলারও রয়েছে একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি
• দু’টি আঙুল দিয়ে সাহায্যে হাতের কবজির সামনে থাকা গ্লাভসের অংশ টেনে সেটি খোলা উচিত।
• নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলে দিতে হবে
• গ্লাভস খোলার পর অবশ্যই হাত ধুয়ে নেবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১২ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০২০
এসআইএস